নিজস্ব প্রতিবেদক: শুধু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) বাসভবনেই নয়, মাঠ প্রশাসনের সব কর্মকর্তার বিষয়টি মাথায় রেখে পুরো উপজেলা কমপ্লেক্সেই সরকারিভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার সচিবালয়ে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বেঠক শেষে কমিটির সভাপতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এ তথ্য জানান।
এ বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান কামাল, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস ও আইনশঙ্খলা বহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাসহ কমিটির অন্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রী মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের বলেন, ইতোমধ্যে আপনারা দেখেছেন ইউএনওদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। এখন আমরা সংশোধন করে বলেছি, সেখানে আরও অনেক অফিসাররা থাকেন। তাই পুরো উপজেলা কমপ্লেক্স সিসিটিভির আওতায় এনে সারারাত পাহারার ব্যবস্থা থাকবে, যাতে কোন ক্রিমিনাল অন্যায়ভাবে কারও ওপর হামলা করতে না পারে।
তিনি বলেন, উপজেলা কমপ্লেক্সে ইউএনও ছাড়াও অধিকাংশ কর্মকর্তা পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। এ সবগুলো পরিবার যাতে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বোধ করেন, যাতে আক্রমণের শিকার না হন এ জন্য পুরো কমপ্লেক্সকে পাহারার আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, দেশে প্রচলিত আইনে কেউ যদি অন্যায় করে তার বিরুদ্ধে প্রতিকার চাওয়ার জায়গা আছে। কারও যদি অভিযোগ থাকে সে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কিন্তু রাতে হামলা করা, এতে সরকারি কর্মচারীরা কাজে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন, ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে যাবেন। কাজেই আমরা তাদের নিরাপত্তার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদ ক্যাম্পাসে ভেন্টিলেটর দিয়ে বাসভবনে ঢুকে ইউএনও ওয়াহিদা খানম এবং তার বাবা ওমর আলীর ওপর হামলা চালানো হয়। এরপর সরকার ইউএনওদের সরকারি বাসভবনে আনসার সদস্য নিয়োগ দেয়। এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত তিন আসামির মধ্যে বহিস্কৃত যুবলীগকর্মী আসাদুল ইসলাম র্যাবের কাছে দাবি করেন চুরি করার উদ্দেশ্যে তিনি ইউএনও’র বাসভবনে ঢুকেছিলেন। বাধাপ্রাপ্ত হয়ে হামলার ঘটনা ঘটান। এ প্রসঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির প্রধান মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, ইউএনওর বাসায় চুরির ঘটনা, এটা মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়নি। কী কারণে তার ওপর হামলা হয়েছে ? আমরা এর নিন্দা তো করেছি, আরও ইনভেস্টিগেশনের জন্য গোয়েন্দা সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছি। এর পেছনে আর কী রহস্য আছে, এটার গডফাদার কোথায় বা কারা সেগুলো দেখার জন্য গোয়েন্দাদের নির্দেশ দিয়েছি।
হামলার সঙ্গে জড়িত অভিযোগ ওঠা একজনকে ছাড়িয়ে নেওয়ার প্রসঙ্গে মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নই। যাকে ছাড়িয়ে নেওয়া হয়েছে, তার সম্পৃক্ততা গোয়েন্দা সংস্থা খতিয়ে দেখছে। তার যদি সম্পৃক্ততা থাকে এবং তাকে প্রভাব খাটিয়ে ছাড় করিয়ে নেওয়ার জন্য যদি এমপির সম্পৃক্ততা থাকে তবে তিনিও আইনের ঊর্ধ্বে থাকবেন না।
আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বেঠকে কক্সবাজারে চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহতের ঘটনাটি নিয়েও বিশদ আলোচনা হয়। এ প্রসঙ্গে মোজাম্মেল হক বলেন, কক্সবাজারে মেজর (অব.) সিনহা হত্যার তদন্ত যৌথভাবে হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে যাতে আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ হয় এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, দেশে অবস্থান করা পাঁচ থেকে সাত শতাধিক অবৈধ বিদেশিকে আটক করে ক্যাম্পে রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত গোয়েন্দা সংস্থার নিজ নিজ প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সমন্বয় করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি বৈঠকে বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।